প্রেমের টানে মালয়েশিয়ার তরুণী নওগাঁয়
মির্জা তুষার আহমেদ,নওগাঁ
প্রেম কখনোই দেশ ভাষা কিংবা সংস্কৃতি কোন কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। মহাসাগর কিংবা সাগর দূরত্ব যা-ই হোক না কেন, প্রেমের কাছে হার মানতেই হয়- এমনটাই প্রমাণ করলেন, জামিল ও নাজিয়া। প্রথমে পরিচয় তারপর বন্ধুত্ব। এক সময় সেটা প্রেমে পরিণত হয়। শুধু তাই নয়, নিজের জন্মভূমি ছেড়ে ৩ হাজার ৬২৪ কিলোমিটার পাড়ি দিয় নওগাঁয় জামিল হোসেনের কাছে ছুটে এসেছেন মালয়েশিয়ান তরুণী নাজিয়া বিনতে শাহরুল হিজাম। এসেই তিন বছরের প্রেমের ইতি টানলেন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে। এই খবরে এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক চঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। বিদেশি এই নববধূকে দেখতে ভিড় জমিয়েছেন স্থানীয়রা।
জামিল হোসেন (২৪) নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার বিলাশবাড়ি ইউনিয়নের বিলাশবাড়ি গ্রামের কালাম হোসেনের ছেলে। তিনি মালয়েশিয়া প্রবাসী। ২০১৮ সালের শুরুতে পাড়ি জমান বিদেশে। দেশটির জহুরবারু মোয়ার থানা এলাকায় একটি ফার্নিচারের দোকানে কাজ করতেন তিনি। একই এলাকার একটি শপিংমলে নিয়মিত যাওয়া-আসার সময় পরিচয় হয় নাজিয়ার সঙ্গে। পরিচয় ধীরে ধীরে পরিণত হয় প্রেমে।
জামিলের ভাষ্য অনুযায়ী, “প্রথমে শুধু বন্ধুত্ব ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা একে অপরকে ভালোবেসে ফেলি। নাজিয়া তার পরিবারকে আমার কথা জানায়। প্রথমে কিছুটা আপত্তি থাকলেও পরে তার পরিবার সম্মতি দেয়। মালয়েশিয়াতেই পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় আমাদের। এরপর বাংলাদেশে এসে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী আবারও বিয়ে করেন তারা। ৩০ জুন দেশে আসার পর ৩ জুলাই গায়ে হলুদের আয়োজন করা হয়। ৪ জুলাই দুপুরে আত্মীয়স্বজন ও এলাকার লোকজনের উপস্থিতিতে বিয়ের অনুষ্ঠান হয় জামিলের বাড়িতে।
নাজিয়া বিনতে শাহরুল হিজাম বলেন, “আমি জামিলকে মন থেকে ভালোবাসি। বাংলাদেশে এসে মনে হচ্ছে, আমি নিজের আরেকটি ঘর পেয়েছি। তার পরিবার আমাকে যেভাবে গ্রহণ করেছে, তা আমি কখনও ভাবিনি। এখানকার মানুষ, পরিবেশ এবং খাবার—সব কিছুই আমার কাছে অসাধারণ লাগছে।
জামিলের মা হালিমা খাতুন বলেন, “আমরা ছেলের পছন্দকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাকে বিয়ে দিয়েছি। ছেলের বউ ঘরে আসার পর থেকেই সবাই তাকে খুব পছন্দ করেছে। সে সহজেই সবার সঙ্গে মিশে যাচ্ছে, বাড়ির কাজেও সহযোগিতা করছে।”
এলাকাবাসীরা জানান, টেলিভিশন কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় বিদেশি মেয়েদের ভালোবাসার টানে বাংলাদেশে চলে আসার ঘটনা শোনা গেলেও এবার তা সরাসরি চোখের সামনে দেখছেন তারা। ফলে কৌতূহল আর আনন্দে ভিড় করছেন নববধূকে একনজর দেখার জন্য।
ভিন্ন সংস্কৃতিতে বেড়ে ওঠা দু’জন মানুষের ভালোবাসা ও সম্পর্ক টিকে থাকাটা সহজ নয়। কিন্তু ভালোবাসা সত্য হলে কোনো সীমানাই বাধা হতে পারে না—এ দম্পতি যেন তারই
বাস্তব উদাহরণ।
